আন্তর্জাতিক রাজনীতি অনেকসময় কেবল আলোচনার টেবিল বা চুক্তির ফাইলে আবদ্ধ থাকে না। কখনো কখনো এটি পরিচালিত হয় ভয়ের রাজনীতি দিয়ে। এই ভয়ের রাজনীতিকে কৌশলগত রূপ দেওয়ার একটি প্রথিতযশা উদাহরণ হচ্ছে Madman Strategy, বাংলায় যাকে বলা যায় ‘পাগলের কৌশল’। এই কৌশলে নেতা নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন তিনি অস্থির, হঠকারী এবং অনির্ভরযোগ্য, এমনকি হিংস্রও। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিপক্ষ যেন সবসময় আতঙ্কে থাকে, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত হয়।
এই কৌশলের ব্যবহার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সময়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে নিক্সন চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও উত্তর ভিয়েতনাম মনে করুক যে তিনি এতটাই অস্থির ও আগ্রাসী যে যেকোনো মুহূর্তে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করে বসতে পারেন। এই “পাগলামি” ইচ্ছাকৃত ছিল—শত্রুপক্ষকে আলোচনায় টেনে আনার জন্য একটি ভয়ভিত্তিক রাজনৈতিক কৌশল।
নিক্সনের পথ ধরে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্বনেতা এই কৌশল প্রয়োগ করেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম, বিশেষ করে তার ইরানবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষিতে। ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি সামরিক হামলা চালায়, যাতে ব্যবহৃত হয় B-2 বোম্বার ও টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। হামলার পর ট্রাম্প এ ঘটনাকে “spectacular success” বলে আখ্যায়িত করেন এবং হুমকি দেন, ইরান যদি এখনই আলোচনায় না আসে, তাহলে ভবিষ্যতের হামলা হবে আরও “brutal and deadly।” এই ধরণের বক্তব্য এবং আচরণ নিছক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়—বরং এটি ছিল পরিকল্পিত ভয় প্রদর্শনের রাজনীতি, যেখানে প্রতিপক্ষ জানেই না, কখন কী ঘটে যেতে পারে।
Madman Strategy মূলত প্রতিপক্ষের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে। কারণ তারা নিশ্চিত হতে পারে না, এই নেতা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। ফলে তারা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় এবং চাপে পড়ে আলোচনার টেবিলে বসে। যদিও কৌশলটি অনেকসময় কার্যকর হতে পারে, তবে এতে বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনাও তৈরি হয়। যদি শত্রুপক্ষ এই আচরণকে সত্যি ধরে নেয় এবং প্রতিক্রিয়া দেয়, তাহলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় আকারের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানবিরোধী সাম্প্রতিক তৎপরতা তাই Madman Strategy-এর একটি ক্লাসিক উদাহরণ। তিনি তার অপ্রত্যাশিত মন্তব্য, আগ্রাসী সামরিক সিদ্ধান্ত এবং হুমকির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন—“আমাকে থামাতে পারবে না, তাই এখনই চুক্তি করো।” কিন্তু এই বার্তা কী ইরান সত্যিই বুঝেছে? নাকি মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি বড় সংঘর্ষের পথ খুলে গেল?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সময়ের হাতে। তবে এটুকু নিশ্চিত, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে Madman Strategy এখনো জীবিত এবং সম্ভবত আরও নতুন রূপে সামনে আসবে